ইসলামে স্বাধীনতা কেমন || Freedom of Islam
স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার:
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর শাসনকালেরর কথা। তখন মিশরের গভর্নর বিখ্যাত সাহাবি মিশরবিজেতা আমর ইবনুল আস রা.। গভর্নরের ছেলে উবায়দুল্লাহ বিন আমর এক গ্রাম্য ছেলেকে মারধর করে বসল। মিসরে বিচার চায়নি সেই ছেলে। হজের মৌসুমে সে খলিফা হযরত উমরের কাছে বিচার নিয়ে এলো।
উমর রা. তৎক্ষণাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাকে নির্দেশ দিলেন, জরুরিভিত্তিতে মিশরের গভর্নর ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করে আমার সামনে হাজির করো।
হজের মৌসুম ছিল। মক্কা লোকে লোকারণ্য। সবাই বিস্ময়ের সাথে দেখল, উমরের আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন মিশরের প্রভাবশালী গভর্নর আমর ইবনুল আস!
উমর রা. বিচারপ্রার্থীকে বললেন, যাও তুমি তোমার বদলা লও। গভর্নরপুত্র তোমাকে যতটা আঘাত করেছে গুনে গুনে ঠিক ততটা আঘাত তার পিঠে ফিরিয়ে দাও। সবশেষে আরেকটা আঘাত তার পিতার পিঠেও দিয়ো।
ফরিয়াদি ছেলেটি বিস্ময়ে হতবাক। বলল, জনাব! গভর্নর তো আমার সঙ্গে অবিচার করেনি, অপরাধ করেছে তার ছেলে! উপরন্তু তিনি মর্যাদাবান সাহাবি! আমি কী করে তার পিঠে আঘাত করব? অসম্ভব। আমার দ্বারা হবে না।
উমর স্বভাবজাত ভঙ্গিতে গর্জে উঠলেন, তোমাকে যা বলেছি তা-ই করো। সেও অপরাধ করেছে। তুমি তাঁর শাসনাধীন ছিলে। তোমাকে সে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার দ্বিতীয় অপরাধ, তাঁর ছেলে ক্যাডারি করে বেড়াচ্ছে আর সে কোনো খবরই রাখছে না।
অতঃপর উমর রা. আমর ইবনুল আসকে লক্ষ্য করে বললেন :
“হে আমর! মানুষগুলোকে কবে থেকে গোলাম বানাতে শুরু করেছ, অথচ তাদের মা তাদেরকে স্বাধীন হিসেবে জন্ম দিচ্ছে?”
হযরত উমর রা.-এর এই বক্তব্য মানবতার পক্ষে শক্তিশালী দলিল। মানুষ ও মানবতার মুক্তির দিশারি ছিলেন তিনি। স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলছেন, জন্মগতভাবেই তো প্রত্যেকটা মানুষ স্বাধীনতা পায়, স্বাধীনতা তার অধিকার। মানুষ তো আর গরু-ছাগল ও জীবজন্তু না, মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণের কারণে সে কিছু অধিকারের হকদার হয়। মানুষের প্রথম অধিকার হলো স্বাধীনতা। তার ইচ্ছেমাফিক চলতে পারবে, কাজ করতে পারবে, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ইনসাফ পাবে, সুশাসন পাবে, কথা বলার অধিকার পাবে ইত্যাদি। রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব হলো মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা, মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা দেওয়া।